ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ও ইঞ্জিনিয়ারিং
প্রশ্ন ১ - ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ কি?
প্রশ্ন ২ - ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ কি আমাকে মানসম্মত ইঞ্জিনিয়ারিং পরিবেশ কিংবা শিক্ষা দিতে পারবে?
প্রশ্ন ৩ - ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে কেন পড়বো এবং পড়বো না?
অনেক সাধারণ কিছু প্রশ্ন, উত্তর গুলো ও বেশ সাধারণ। দেশে ৪০+ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভীরে
৪ টি সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ মানসম্মত ইঞ্জিনিয়ার তৈরিতে আসলে কতটা গুরুত্ব বহন করে, তা এই
৩ টি প্রশ্নের উত্তরের মাধ্যমে বলার চেষ্টা করবো।
বাংলাদেশে ৪ টি সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ আছে এবং এগুলো স্নাতক পর্যায়ের ডিগ্রী প্রদান করে।
খাটি বাংলা ভাষায় একজন প্রোপার আইডিয়াল ইঞ্জিনিয়ার বানানোর আতুর ঘর বলা চলে। এমন কাজটা
দেশের ৫ টি ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয় তো করেই সাথে বাকী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলো ও করে।
তবে কথায় আসি, ৪ টা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের দরকার কি? আসলেই আলাদা ভাবে দরকার কি?
দরকার টা ছিলো ৫ টি ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে কলেজ গুলোর থেকে দেশের জন্য মানসম্মত প্রকৌশলী সৃষ্টি করা।
ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ কি তার একটা মোটামুটি উত্তর পাওয়া গেছে।
এবার আসি ২য় প্রশ্নে , এতো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভীরে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ কি আমাকে মানসম্মত ইঞ্জিনিয়ারিং পরিবেশ কিংবা শিক্ষা দিতে পারবে?
পারবে কি একটা মানসম্মত ইঞ্জিনিয়ার তৈরি করতে? মানের হিসেব টা বাংলাদেশে অনেক কঠিন কারণ এই স্ট্যান্ডার্ড ধরার মতো অপশন কম,
তুলনা যেহেতু করতেই হবে তাহলে ইঞ্জিনিয়ারিং স্পেশালাইজড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথেই করা যাক। বিশ্বের নামিদামি দেশ গুলো যেমন গবেষনাধর্মী
শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে চিন্তা করে আমাদের দেশে তেমন টা না হলেও আমাদের দেশে যা সাফল্য এদেশে দেখা যায় তা টেকনিক্যাল সাইড থেকেই দেখা যায়,
যেমন - ইঞ্জিনিয়ারিং,মেডিকেল,এগ্রিকালচার ইতায়াদি। সেটা যেই বিশ্ববিদ্যালয় ই হোক না কেন, হিসেব করলে
দেখা যাবে ১ বছরের সবচেয়ে বেশি গবেষনা
হয় ইঞ্জিনিয়ারিং না হয় ফার্মেসি,জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং,বায়োক্যামেস্ট্রি না হয় এগ্রিকালচার সাইড থেকেই হয়।
তাহলে বুঝাই যায় এদেশেও ইঞ্জিনিয়ারিং এ অন্তত কিছু হলেও মনোযোগ দেয় এদেশের বিশ্ববিদ্যালয় গুলো। আর সেটা যদি হয় ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়
তবে তারা শতভাগ দেয় তা তো বুঝাই যায়।
কিন্তু ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে আসলে হয় কি? তাদের কি আসলেও এই ধরনের গবেষনার সুযোগ আছে?? আছে গবেষনার মতো ল্যাব??
সেদিকে পরে আসি, আগে দেখি সমসাময়িক দিকে ভাবলে এদেশের ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয় তে কি কি আছে? যুগের সাথে তাল মিলিয়ে তারা কি আপডেট করছে?
শুধু ২০১৮-১৯ বছরের সংযোজন গুলো,
*বুয়েটের নতুন সংযোজন রোবটিক্স ল্যাব
*কুয়েটের High Definition Visual Computing and Multimedia Lab
*রুয়েটের আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্স ল্যাব
*২ কোটি ৭৯ লক্ষ টাকা ব্যয়ে চুয়েটে স্থাপিত হতে যাচ্ছে "Smart Power system Simulation Lab" Importing from Canada
এটা তো এবছরের আপডেট ল্যাব ফ্যাসিলিটিস, প্রত্যেক বছর এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন আপগ্রেড হতেই থাকে।
এছাড়াও দেশের সেরা এনিম্যাশন ল্যাব ঢাবি এবং ভি আর ল্যাব রাবি তে আছেই। সাস্টের ল্যাবের কথা বললেও কম হবে, যদিও এই ৩ টার একটাও পূর্নাঙ্গ ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয় নয়।
প্রত্যেক ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয় ই প্রতি বছর আলাদা ভাবে ৩০০+ কোটি টাকা করে বাজেট পায়, সেখানে উন্নয়ন বাজেট ও তো থাকে,
তবে সেখানেও গবেষণার বাজেট টা খুব সীমিত ই থাকে,
যার জন্য রেসিং কার বানিয়েও রুয়েটিয়ান রা খুব একটা সুবিধা করতে পারে নি।
এতো সীমাবদ্ধতার মাঝেও ন্যুনতম ফান্ডিং এ নানা রকম ইনোভেটিভ কাজ করে যাচ্ছে ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
কিন্তু একটা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে কি আছে? কি করতে পারে সেখানের শিক্ষার্থীরা? কতটুকু বাজেট ই পায় কলেজ গুলো?
কতটুকু আপগ্রেড হয় এইসব কলেজের ল্যাব?
এর একটা ছোট উদাহরণ দেই, কোন এক ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের একবার ল্যাব রিপেয়ার করার কাজ চলছিলো যেখানে গিয়ে দেখা গেলো,
পিসিতে নতুন সিমুলেশন সফটওয়্যার রান করার মতো এনাফ কনফিগারেশন ই এভেইলেবল না। সস্তা ক্র্যাক ডিস্কের করা হলো সেটাপের কাজ,
ল্যাবের ২ টা সার্ভার টাওয়ার পরে রইলো এক কোণায়। সিএসই ল্যাবের এনিমেশন ল্যাবের পিসি কনফিগে র্যাম হলো ২ জিবি, অস্বাভাবিক কিছু না
যারা এ নিয়ে ন্যুনতম জ্ঞান রাখে তারা বুঝতেই পারবে একটা ইঞ্জিনিয়ারিং স্পেশালাইজড শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১২ বছর আগের ল্যাব এখন এসবে অচল হওয়ার পথে।
কারণ সরকার এসবের জন্য বছরে বছরে আপডেটের কোন অপশন এখানে দেয় নি।
এছাড়া বাস্তব কথা হলো শুধু সিমুলেশন ল্যাব নয় টোটাল কম্পিউটার ল্যাব কিংবা অন্যান্য ল্যাবের প্রোপার অরিজিনাল সফটওয়্যার সেবা কিংবা হাইস্পিড অপটিক ফাইবারের
ন্যুনতম সেবা কোন সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে নেই। নামে মাত্র ল্যাব থাকলেও কাজের জন্য কিংবা গবেষণার জন্য সেসব সমসাময়িক প্রযুক্তি থেকে অনেক পিছিয়ে।
যেখানে একটা ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বছরে বছরে কোটি কোটি টাকা শুধু ল্যাব আপগ্রেডের পিছনে ব্যায় হয় সেখানে অবহেলায় থাকে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ,
এমনও উদাহরণ আছে,অনেক ল্যাবের যন্ত্র গুলো ১২ বছরে সেটাপ করার কথা এক বার ও কেও ভাবে নি, সেই ল্যাবের থিসিসের জন্য পাশের পলিটেকনিকেও যাওয়া লেগেছে অনেকের।
একটা ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক সীমাবদ্ধতা থেকেও তারা ইনোভেটিভ কাজ করার যে সুযোগ টা পায় তা তাদের ন্যুনতম মানের জন্য কিন্তু ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের
এই মান দিয়ে কি আদৌ স্ট্যান্ডার্ড লেভেলে পৌছানো সম্ভব?? কতটুকু মানসম্মত সেটার উত্তর আপনারাই খুজে নিন।
আমাদের দেশের অন্যান্য ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী স্টুডেন্ট রা ন্যুনতম সুযোগ কাজে লাগিয়ে দেশ বিদেশে কম্পিটিশন চষে বেড়াচ্ছে, তবুও অভিযোগ আর বাস্তবতা হলো বিশ্ববিদ্যালয় তাদের তেমন সাপোর্ট দেয় না কিংবা যা দেয় তা এনাফ না।
তাহলে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের একজন ছেলে কি পাচ্ছে? কতটুকু পাচ্ছে? কতটুকু যে নিজের স্বপ্নগুলা বাস্তবে রূপ দেয়ার জন্য সুযোগ পাচ্ছে? ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের স্টুডেন্ট দের ও তো
এসব কিছু পাওয়ার অধিকার আছে। তাদের ও অধিকার আছে ভালো ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার আর গবেষণার মিনিমাম পরিবেশ পাওয়ার। এখানে ভালোই বোঝা যাচ্ছে কতটুকু পাওয়া যাচ্ছে।
৪ টা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ কে বছরে সর্বসাকুল্যে ২০ কোটি টাকা বাজেট দেয়া হয় কিনা সন্দেহ, তাদের ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্রেন্ডলি পরিবেশ, যুগের সাথে আপগ্রেড করা তো দূরে থাকুক।
এর মাঝে আবার নতুন আরো ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ যেখানে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং কে ইঞ্জিনিয়ারিং সাবজেক্ট বলে সঙ্গায়িত করা হয়েছে এক প্রকল্পে। এই হচ্ছে প্রকৌশল তৈরির নীতি নির্ধারকদের অবস্থা।
এবার আসি ফাইনাল প্রশ্নে, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে কেন পড়বো এবং পড়বো না?
ইচ্ছা যদি হয় ইঞ্জিনিয়ারিং সার্টিফিকেট আর চাকুরি তাহলে পড়েন ,পাশ করে একটা চাকুরি নিয়ে নেন।
কারণ আর যাই হোক পাশ করে বেকার কেও বসে নেই।
কারো যদি প্যাশন থাকে ইঞ্জিনিয়ারিং তবে নিজেকে গোবরে পদ্মফুল হিসেবে ফোটানো ছাড়া এখানে পড়ার মানে নেই।
তারপর যার যার ইচ্ছাটাই মেইন।
অনেকে বলতে পারে, একটা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের স্টুডেন্ট কি করে এসব বলে। আসলে বিষয় গুলা আক্ষেপ থেকে বলা,
অধিকার আদায় না করার আক্ষেপ থেকে। আজ হিসবে করলে দেখা যাবে হাতে গোনা কিছু গবেষণা পত্র পাওয়া যাবে কলেজ থেকে পাবলিশ হওয়া,
আবার অনেকে এসব নিয়ে মাথা ঘামায় না। র্যাংকিং ইন্টারন্যাশনাল র্যাংকিং তো দূরের কথা। নিজের প্রতিষ্ঠান কি সেটাও ক্লিয়ার ভাবে জানে না আবার এ নিয়েও কেও চিন্তা করে না।
আক্ষেপ গুলোর ভাষা ই এমন হয়ে লেখায় প্রকাশ পেলো, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের সিস্টেম টাই পুরো ভুলে ভরা অবস্থায় শুরু হয়েছে, যা মডিফাই করার
কোন যোগ্য জনবল ১ যুগেও হয়ে উঠে নি। এর মাঝে নতুন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ প্রজেক্ট সেগুলো কতটা দেশ ও জাতির উপকারে আসবে না জাতিকে অন্ধকারে ঠেলে দিবে সেটাই দেখার বিষয়।
তারিকুল ইসলাম
ইইই ডিপার্টমেন্ট
ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ